ফ্রান্সে গির্জায় সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের নেতারা। দেশটির নিস শহরের নটর ডেম গির্জায় বৃহস্পতিবার ছুরি হামলায় নিহত হন তিন জন। তাদের মধ্যে দুজন শিরশ্ছেদের শিকার হন।
পুলিশের অভিযানের সময় গুলিবিদ্ধ হামলাকারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিসে গির্জায় হামলার দুই ঘণ্টার মধ্যে আরেক শহর অ্যাভিননে পুলিশের গুলিতে নিহত হন এক বন্দুকধারী।
এছাড়া, সৌদি আরবের জেদ্দায় ফরাসি কনস্যুলেটে ছুরি হামলায় আহত হয়েছেন একজন নিরাপত্তা কর্মী।
সবকটি ঘটনাকেই ইসলামি চরমপন্থী গোষ্ঠীর কাজ বলে দাবি করেছে ফ্রান্স।
নিসে নটর ডেম গির্জায় হামলার ঘটনা ঘটে সকাল ৯টার দিকে। প্রার্থনার জন্য আসা সত্তোরোর্ধ এক নারীকে ছুরি চালিয়ে গির্জার সামনে শিরশ্ছেদ করেন হামলাকারী যুবক।
- আরও পড়ুন: ফ্রান্সে গির্জায় ঢুকে শিরশ্ছেদ
এর পরে শিরশ্ছেদের শিকার হন ৪৫ বছরের এক ব্যক্তি। তিনি ওই গির্জার ওয়ার্ডেন ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হামলাকারী আফ্রিকান বংশোদ্ভুত এক নারীকেও ছুরিকাঘাত করে। ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে একটি বারে আশ্রয় নেয়ার পর সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
পরে পুলিশ অভিযান চালায় গির্জায়। গুলিতে আহত অবস্থায় ধরা পড়েন হামলাকারী। প্রাথমিকভাবে তার নাম ‘ব্রাহিম’ বলে জানা গেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হামলাকারী যুবক একাই হামলার সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।
ফ্রান্সের সন্ত্রাসবিরোধী প্রসিকিউটর বিভাগকে হামলার তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে।
শহরের মেয়র ক্রিস্টিয়ান এসট্রসি এক টুইটে জানান, নটর ডেম গির্জায় ঢোকার সময় ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দেয় হামলাকারী।
তিনি বলেন, ‘অনেক হয়েছে। আমাদের সীমানা থেকে ইসলামো-ফ্যাসিবাদ উপড়ে ফেলতে এবার শান্তির আইন থেকে ফ্রান্সের সরে আসার সময় হয়েছে।’
নিস থেকে ১২০ মাইল দূরের শহর অ্যাভিননে পুলিশের গুলিতে এক বন্দুকধারীর নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে সকাল সোয়া ১১টার দিকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বন্দুক হাতে এক ব্যক্তি 'আল্লাহু আকবর' ধ্বনি দিয়ে পথচারীদের হুমকি দিতে শুরু করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশ না মানায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
নিহত ব্যক্তির পরিচয় তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।
সৌদি আরবের জেদ্দায় ফরাসি কনস্যুলেটে ছুরি হামলায় আহত নিরাপত্তা কর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার আঘাত গুরুতর নয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
হামলাকারীকে গ্রেফতার করেছে সৌদি পুলিশ। এ ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে সৌদি আরবে ফরাসি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে রিয়াদের ফরাসি দূতাবাস।
বিশ্বনেতাদের নিন্দা
ফ্রান্সে হামলার ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়ে নিহতদের স্বজনের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এমন কোনো যুক্তি নেই যা কাউকে হত্যা বা সহিংসতার বৈধতা দিতে পারে। এটি পরিষ্কার যে, যারা একটি পবিত্র জায়গায় এ রকম নৃশংস হামলা চালিয়েছে তাদের কোনো ধর্ম, মানবতা ও নৈতিক মূল্যবোধ নেই।’
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেভিড সাসোলি এক টুইটে বলেন, ‘নিসের ভয়াবহ হামলার খবরে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। ইউরোপের সবাই এর বেদনা অনুভব করছে।’
- আরও পড়ুন: ফরাসি প্রেসিডেন্টের পাশে দাঁড়াল ভারত
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এক টুইটে বলেন, ‘আক্রমণের শিকার হওয়া মানুষের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সংহতি। আমরা সবাই সন্ত্রাস ও ঘৃণার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আছি।’
টুইটে সংহতি জানিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে। ইতালিয়ান ও ফরাসি উভয় ভাষাতেই তিনি লিখেছেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ।’
খ্রিষ্টান ধর্মের সর্বোচ্চ নেতা পোপ ফ্রান্সিস হামলায় হতাহতদের জন্য প্রার্থনা করছেন বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে ভ্যাটিকান সিটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সন্ত্রাস ও সহিংসতা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আজকের হামলা প্রেম ও শান্তির একটি জায়গায় মৃত্যুর বীজ বপন করেছে।’
হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ফ্রান্সের মুসলিমরাও। দ্য ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল অফ দ্য মুসলিম ফেইথ এক টুইট বার্তায় লিখেছে, ‘আমরা নিসের নটর ডেম গির্জায় ঘটা সন্ত্রাসী হামলার কঠোর নিন্দা জানাই।’
প্যারিসের উপকণ্ঠের একটি স্কুলে মহানবী হজরত মোহাম্মদের (সা.) কার্টুন দেখানোর জেরে গত ১৬ অক্টোবর স্কুলশিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে শিরশ্ছেদ করেন চেচেন বংশোদ্ভূত এক যুবক।
এ ঘটনার পর প্যাটির ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনকে সমর্থন করে বিবৃতি দেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ।
মাখোঁর এই অবস্থানের প্রতিবাদ চলছে মুসলিম বিশ্বে। বিভিন্ন দেশে ফরাসি পণ্য বর্জনেরও ডাক দেয়া হয়েছে।